“মাতৃভূমি অথবা মৃত্যুর” পেছনের ইতিহাস

Spread the freedom

চে গেবারার জন্মভূমি আর্জেন্টিনা। কিন্তু জন্মভূমি অথবা মৃত্যু এই আইকনিক বক্তব্য তিনি কিউবার পক্ষে দিয়েছিলেন। যে দেশ তার জন্মভূমি না, সেই দেশের পক্ষে তিনি এমন বক্তব্য কেনো দিলেন? এটা কি শুধুই আবেগ, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো রাজনীতি?
চে গেবারা এই বক্তব্য দেন ১৯৬৪ সালের ১১ ডিসেম্বর, জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে। এই অধিবেশনের প্রত্যক্ষ শ্রোতারা হলেন তাবৎ দুনিয়ার স্বাধীন স্বীকৃত রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা। তবে মুক্তিসংগ্রামরত সকল জনগোষ্ঠিরই জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনের দিকে একটা নজর থাকেই। গেবারার শ্রোতা তাই বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষ।
গেবারা তার বক্তব্যে আমেরিকাকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। প্রায় একঘন্টার বক্তব্যে গেবারা জাতিসঙ্ঘকে প্রশ্ন করেছিলেন কেনো আফ্রিকার কালো মানুষদের অধিকারের জন্য জাতিসঙ্ঘ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারছে না? তবে তার বক্তব্যের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো আমেরিকা মহাদেশের মানুষের মুক্তি নিয়ে। এখানেই গেবারার জন্মভূমি শব্দটা ব্যবহারের কার্যকারণ খুঁজে পাওয়া যায়। গেবারা গোটা পৃথিবীর মানুষের মুক্তি চাইতেন। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বিশ্বব্যাপী মুক্তির ডাক রাজনৈতিকভাবে আকর্ষণীয় নয়। জনমানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে জন্মভূমির পরাধীনতার দিকে নজর দিতে হবে। বিশ্বের মুক্তির দরজা খুলবে জন্মভূমির মুক্তির মধ্যে দিয়ে।
গেবারা কিউবার প্রতিনিধিত্ব করলেও আমেরিকা মহাদেশের মুক্তিকামী রাষ্ট্র বলিভিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা এসব রাষ্ট্রকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। এজন্যই “মুক্তি অথবা মৃত্যুর” আহবান না করে “জন্মভূমি অথবা মৃত্যুর” কথা বলেছিলেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে অনেকগুলো জাতিরাষ্ট্র। উদাহরণ হিসাবে নেপাল ও মালদ্বীপের কথা বলা যায়। মালদ্বীপের জনগণ ভারতীয় মদদপুষ্ট সরকারকে মেনে নেয়নি। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মুইজ্জুর সরকারকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। বাংলাদেশের দীর্ঘ নির্বাচনহীনতার পেছনে ভারতের ভূমিকা সন্দেহাতীত। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ছাত্রজনতা ও সৈনিক ভারতীয় মদদপুষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করে। এটা স্পষ্ট যে উপমহাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে হুমকি হিসাবে দেখছে।
গণ-অভ্যুত্থানে বহুল প্রচারিত স্লোগান ছিলো গেবারার “মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু”। উপমহাদেশে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই স্লোগান শুধুমাত্র বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না,বরং তার একটি আঞ্চলিক রূপ আছে। মুক্তির আকাঙ্ক্ষাতো শুধু বাংলাদেশের মানুষের না; এই আকাঙ্ক্ষা নেপাল, মালদ্বীপের মানুষের মধ্যেও আছে। এমনকি ভারতের বহুজাতীর মানুষের মধ্যেও নিজস্ব স্বাধীন ভূখন্ডের বাসনা আছে। উদাহরণ হিসাবে খালিস্তানপন্থীদের কথা বলা যায়। আরো বলা যায় সেভেন সিস্টার্সের কথা।
বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের স্প্রিরিট আঞ্চলিকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য “জন্মভূমি অথবা মৃত্যু” একটি বলিষ্ঠ স্লোগান। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত সকল মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির সংগ্রামকে অকুন্ঠভাবে সমর্থন জানায়। জন্মভূমির মুক্তি থেকেই দুনিয়ার মানুষের মুক্তি কায়েম হবে। গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট গোটা অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়ুক।

ইনকিলাব জিন্দাবাদ।


Spread the freedom

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *