ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য জয় এবং বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব

Spread the freedom

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট, ২০২৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হলে বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব পুনরায় গভীরভাবে অনুভূত হবে। তার প্রথম মেয়াদের নীতি এবং বৈশ্বিক সম্পর্কের পুনর্গঠন ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার দ্বিতীয় মেয়াদ কীভাবে বৈশ্বিক শক্তি ভারসাম্য, অর্থনীতি, এবং নিরাপত্তা নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।


ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বৈশ্বিক নীতি

১. “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি

ট্রাম্প প্রশাসনের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সামরিক চুক্তি, এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করে।

  • প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসা।
  • ইরান পরমাণু চুক্তি প্রত্যাহার।
  • ন্যাটো এবং বিশ্বব্যাপী সামরিক জোটগুলোতে মার্কিন ভূমিকা পুনর্মূল্যায়ন।

২. চীন-বিরোধী অবস্থান

ট্রাম্পের প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলে। চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে।

৩. মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব

  • ইসরায়েলের পক্ষে জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি।
  • ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ।
  • আরব বিশ্বে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা (আব্রাহাম চুক্তি)।

ট্রাম্পের পুনরায় জয়: সম্ভাব্য প্রভাব

১. যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

  • অভিবাসন নীতিতে আরও কঠোর পদক্ষেপ।
  • স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা খাতে ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতিকে আরও “মজবুত” করার প্রচেষ্টা।
  • উদারপন্থী এবং রক্ষণশীলদের মধ্যে বিভক্তি আরও বাড়তে পারে।

২. চীন-মার্কিন সম্পর্ক

  • চীনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অর্থনৈতিক চাপ বাড়তে পারে।
  • এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সামরিক প্রভাব প্রতিরোধে আরও সক্রিয় নীতি গ্রহণ।
  • বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতে চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামানো।

৩. রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্ক

  • রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে আগেও বিতর্ক ছিল। তার দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে।
  • ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে।

৪. মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনীতি

  • ইসরায়েলের প্রতি আরও জোরালো সমর্থন।
  • ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ, যা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।
  • সৌদি আরব এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার প্রচেষ্টা।

৫. বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন নীতি

  • বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) প্রতি মার্কিন অবিশ্বাস অব্যাহত থাকবে।
  • পরিবেশগত নীতিতে আরও শিথিলতা আসবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রভাব

১. ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো

  • ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
  • ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় স্বনির্ভর হওয়ার দিকে মনোযোগ দেবে।

২. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য

  • চীন এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের আরও অবনতি।
  • যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (USMCA) পুনর্মূল্যায়ন।
  • বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে।

৩. জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা

  • জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমানো হতে পারে।
  • আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে নীতি নির্ধারণ করতে পারে।

৪. উদীয়মান শক্তির ভূমিকা

  • ট্রাম্পের আমেরিকান নীতির কারণে চীন, রাশিয়া, এবং ভারতের মতো দেশগুলো বৈশ্বিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হতে পারে।

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব

১. বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি

  • মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার আরও কঠিন হতে পারে।
  • চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক চাপ বাড়তে পারে।

২. শ্রমিক রেমিট্যান্স

  • ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাকরির ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

৩. কৌশলগত সম্পর্ক

  • বাংলাদেশকে মার্কিন-চীন বা মার্কিন-ভারত সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
  • দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনীতি বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়ই বয়ে আনতে পারে।

উপসংহার

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়া শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের বার্তা বহন করতে পারে। তার নীতি বৈশ্বিক বাণিজ্য, নিরাপত্তা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে বাধ্য হবে। ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি কীভাবে বিশ্বব্যাপী বহুপক্ষীয়তার বিপরীতে একক নেতৃত্বে আরও জোরালো ভূমিকা নেয়, তা সময়ই বলে দেবে।


Spread the freedom

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *