বাংলাদেশের বেকারত্ব ও চাকরির বাজার: বর্তমান অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

Spread the freedom

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ। এই যুবসমাজ দেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি হতে পারে। তবে, বর্তমানে বেকারত্ব ও চাকরির বাজারের সংকট ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। চাকরির সুযোগের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ এবং দক্ষতার অভাব একটি ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

বেকারত্বের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪% কার্যত বেকার। তবে এই সংখ্যা বাস্তব চিত্রের তুলনায় কম হতে পারে, কারণ আড়ালে থাকা বেকারত্ব ও আংশিক বেকারত্ব বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

  • তরুণ বেকারত্ব: দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১০.৬%, যা খুবই উদ্বেগজনক।
  • শিক্ষিত বেকারত্ব: উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। প্রায় ৪৭% স্নাতক ডিগ্রিধারী তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না।
  • নারী বেকারত্ব: নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ।

চাকরির বাজারের অবস্থা

বাংলাদেশে চাকরির বাজারে বিভিন্ন খাতের মধ্যে অসমতা লক্ষ করা যায়।

  1. সরকারি চাকরি:
    সরকারি চাকরিতে সীমিত পদ থাকায় প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র। একটি পদের জন্য হাজারো প্রার্থী আবেদন করেন।
  2. বেসরকারি খাত:
    • প্রযুক্তি খাত: আইটি এবং ফ্রিল্যান্সিং খাতে কিছুটা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হলেও, তা এখনও সম্ভাবনার তুলনায় কম।
    • উৎপাদন ও গার্মেন্টস খাত: এই খাতগুলোতে সাধারণত দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেশি, কিন্তু উচ্চশিক্ষিতদের জন্য সুযোগ সীমিত।
    • স্টার্টআপ: নতুন উদ্যোক্তারা চাকরির বাজারে কিছুটা প্রভাব ফেললেও, তারা এখনও প্রধান বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
  3. প্রবাসী কর্মসংস্থান:
    মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী শ্রমিক পাঠানো বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, করোনা পরবর্তী সময়ে এই খাতেও সংকট দেখা দিয়েছে।

বেকারত্বের কারণ

বেকারত্ব বাড়ার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

  1. দক্ষতার অভাব: শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব চাকরির বাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারছে না।
  2. জনসংখ্যার চাপ: জনসংখ্যার তুলনায় চাকরির সুযোগ অত্যন্ত সীমিত।
  3. শিল্পায়নের অভাব: দেশের শিল্প খাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি।
  4. প্রযুক্তিগত পরিবর্তন: অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি শ্রমিকের পরিবর্তে মেশিন ব্যবহার করছে, ফলে কর্মসংস্থান কমছে।

সমাধানের পথ

  1. শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার:
    শিক্ষাব্যবস্থাকে চাকরির বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। প্রযুক্তি, সফট স্কিল, এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
  2. উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ:
    তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহজ শর্তে ঋণ এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
  3. শিল্পায়ন:
    নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে।
  4. প্রবাসী কর্মসংস্থান:
    দক্ষ প্রবাসী শ্রমিক তৈরিতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ভাষা শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
  5. নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি:
    কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নিরাপত্তা, সমান সুযোগ, এবং পরিবেশবান্ধব কর্মস্থলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।

উপসংহার

বাংলাদেশের বেকারত্ব একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। সঠিক নীতি, যথাযথ উদ্যোগ, এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। দেশের তরুণ প্রজন্মকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে।


Spread the freedom

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *