দৃষ্টিভঙ্গি

তরুণ এবং বৃদ্ধ—ভিন্ন প্রজন্মের দুজন নাস্তিকের মধ্যে কথা হচ্ছিল। একজন ৫০ বছর আগে ধর্মত্যাগ করেছে, আর অন্যজন ৫ বছর আগে।

আলাপের এক পর্যায়ে তরুণ নাস্তিকটি বলে বসলো, পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ মানুষ সব নাস্তিক হয়। দুনিয়াজুড়ে এত যুদ্ধ-বিগ্রহ-অশান্তি সব আস্তিকদের জন্য।

এ কথা শুনে বয়স্ক নাস্তিক মানতে পারল না। না-সূচক মাথা নেড়ে বললো,

“কিঞ্চিৎ ভুল কহিলে বাছা।

এই পৃথিবীতে ১০০ জন খুনি, ধর্ষক, যুদ্ধবাজ, গণহত্যাকারী শ্রেষ্ঠ-খারাপের তালিকা করা হলে সেখানে ৭৮ জনই হবে নাস্তিক।”

নবাগত নাস্তিক এই কথা শুনে কিছুটা ক্রুদ্ধ হলো। মুখের ওপর বলেই বসলো—বয়স্ক নাস্তিকদের এই এক সমস্যা। মরার সময় যত ঘনিয়ে আসে ধীরেধীরে কথাবার্তাও চেঞ্জ হয়। আপনি সারা জীবন নিজেরে ইন্সটিটিউশনাল রিলিজিয়ন-বিরোধী লোক দাবি করে এখন কন নাস্তিকরাই সব চেয়ে খারাপ? আপনি দাদু ভণ্ড নাম্বার ওয়ান।

তরুণের কথা শুনে বৃদ্ধ নাস্তিকটি সস্নেহে একটু হাসলো। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে নাতির বয়সী ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো,

‘আচ্ছা বলো তো—কোরান কার বাণী? আল্লার না মুহাম্মদের?’

তরুণটি কনফিডেন্সের সাথে জবাব দেয়, ‘অবশ্যই মুহাম্মদের। নিজের সুবিধামত আয়াত বানিয়ে সে আল্লার নামে চালিয়ে দিয়েছে।’

এবার বৃদ্ধ নাস্তিকের জবাব—যে ব্যক্তি বনু কুরাইজার শত-শত ইহুদি হত্যার জন্য দায়ী, যে ব্যক্তি পালিত পুত্রের বউকে বিয়ে করার জন্য আসমানী আয়াত নাজিল করে, যে ব্যক্তি বিশ্রামের সময় তাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে সে জন্যও কোরানের আয়াত নাজিল করে—তুমি কি মনে করো সে আল্লাহবিশ্বাসী একজন পরম আস্তিক? এক কথায় উত্তর দাও—নবী আস্তিক না নাস্তিক ছিল?

এবার তরুণটি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
বিশ্বাসী আস্তিক হলে আল্লার নাম ব্যবহার করে এত মিথ্যা কথা কেউ বলতে পারত না।
নবীর নাস্তিকই হওয়ারই বেশি সম্ভাবনা।

এবার বৃদ্ধ হাসতে হাসতে জবাব দেয়,
আস্তিকতার জন্মই দিয়েছে নাস্তিকরা।
তাহলে নাস্তিকরাই পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ লোক এটা বলে আমি কি অন্যায় করলাম?

কুদরত

ঈদের দিন সকাল বেলা। প্রচণ্ড মেঘে আকাশ ছেঁয়ে আছে। এই বুঝি বৃষ্টি নামলো। লোকেরা ঈদগাঁ ময়দানে জড়ো হচ্ছে ভয়ে ভয়ে। এমন সময় হঠাৎ বাতাস শুরু হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো। লোকেরা শান্তিতে আদায় করলো ঈদুল ফিতরের সালাত।

নামাজ শেষে ইমাম সাহেব মুছুল্লিদের উদ্দেশ্যে মাইকে বললেন : দেখুন ভাইসব। আল্লাহর কী অশেষ কুদরত! কালবৈশাখীর মেঘ এক নিমিষেই আল্লাহ উড়িয়ে নিয়ে গেলেন। আমাদের ওপর একফোঁটা বৃষ্টি পড়লো না। আমাদের উপর এ আল্লার খাস রহমত। কারো কোনো কষ্ট হয়নি জামাতে শরিক হতে। আল্লার এত কুদরতি দেখেও নাফরমান বান্দারা ঈমান আনবে না!?

ঠিক পরের বছরের ঘটনা। ঈদের দিন সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। লোকেরা ঈদগাঁ ময়দানে জড়ো হচ্ছে ভয়ে ভয়ে। ঈদুল ফেতরের নামাজ শুরু হলো। প্রথম রাকাতেই রুকুতে যেতে না যেতে শুরু হলো প্রচণ্ড বাতাস আর বৃষ্টি। তুমুল বৃষ্টিতে এক একজন মুছুল্লি কাকভেজা অবস্থায় নামাজ শেষ করলো।

ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে কোনোমতে মুনাজাত শেষ করলেন। তারপর মাইকে বললেন, দেখুন ভাইসব। আল্লাহর কী অশেষ কুদরত! সবাই গরমে কষ্ট পাচ্ছিল। আল্লাহ বৃষ্টি দিয়ে সবার প্রাণ শীতল করে দিলেন। আমাদের উপর এ আল্লার খাস রহমত। আল্লার এত কুদরতি দেখেও নাফরমান বান্দারা ঈমান আনবে না!?

জীবন এক প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্র

আবদুল্লাহ আল তারেক

ব্ল্যাকহোল শুষে নেয়ার আগে আমরা একটি চেতনার জগতে জন্ম নিয়েছিলাম।

আমাদের গ্রহে ক্ষুধা ছিল
আত্মহত্যার মতো দুঃখ ছিল
ছিল প্রেমের মতো জ্বলন্ত লাভা।

আমাদের সংগ্রাম টিয়ের ঠোঁটের মতো লাল

মৃত্যুন্মুখ ভয়াবহ জীবনের ওপর দিয়ে হেঁটেছি আমরা।

জ্বলন্ত কয়লার মতো হৃদপিণ্ড বহন করে বেঁচেছি।

রোগগ্রস্ত শুয়োরের মতো কেঁদেছি একাকী।

রক্তের ভেতর অলৌকিক অ্যাসিড নিয়ে হেঁটেছি দুঃস্বপ্নের পথ

এত জ্বলনোন্মুখ, এত চিতাগামী, এত বারুদবুক কেন হয় জীবনের লাল পাণ্ডুলিপি!

জীবন, তোমার এত বিকিরণ, এত বিস্ফোরণ!

পৃথিবীর অন্ধকারে যত আছে ঝাঁকঝাঁক জোনাকি
মহাকাশের তার চেয়ে বেশি আছে জ্বলন্ত তারা।